রাইসু বিষয়ক সতেরো

‘ব্রাত্য রাইসু’ নামের সঙ্গে পরিচয় স্কুলে পড়ার সময়। পত্রিকায় উনার বইয়ের নাম দেখছিলাম—আকাশে কালিদাসের লগে মেগ দেখতেছি। নামটা তার অভিনবত্বের কারণেই মাথায় থেকে গেছিল। আর সাহিত্য পাতায় পরে তার ‘নদীমধ্যে গুরুসঙ্গ’ পইড়া মজা পাইছিলাম। যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর।

যোগাযোগ বলতে উনার ইয়াহু গ্রুপ কবিসভায় কী উপলক্ষ্যে জানি কবিতা চাইছিল, আমি মেইল করে কবিতা পাঠাইছিলাম। রাইসু ভাই সেগুলি গোনায় ধরেন নাই। কী হইল জানতে চেয়ে আমি মনে হয় আবার মেইল দিছিলাম। উনি অইটার আর রিপ্লাই করেন নাই বোধ হয়। মনে নাই ঠিক।

রাইসু ভাইয়ের সঙ্গে সরাসরি পরিচয় ২০১৪ তে। মূলতঃ অর্থসংক্রান্ত কারণে। তখন আমার পেপাল অ্যাকাউন্টে ডলার থাকত, উনি আমার থেকে সেই ডলার কিনে নিয়ে সাম্প্রতিক ডটকম সহ তার আর আরো কী কী ওয়েব সাইটের ডোমেইন, হোস্টিং এইগুলার পেমেন্ট করতেন। উনারে আমার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটায় দিছিলেন রক মনু ভাই। তারপর কেমনে কেমনে জানি রাইসু ভাই বন্ধু মানুষ হয়ে গেলেন। উনারে নিয়া ৫০ খানা কথা লিখব ভাবছি—বিগত ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে।

ইফতেখার ইনান

১. রাইসু ভাইয়ের বয়স ৫০ বছর হইছে এইটা আমার জন্য একটা স্বস্তির ঘটনা। উনার বয়স ৫০—এতে আমার কাছে ৫০ বছর বয়সের কোয়ান্টিটেটিভ ভ্যালু কমে গেছে এবং কোয়ালিটেটিভ ভ্যালু বেড়ে গেছে। ৫০-এর যেই বুড়া টাইপ ইম্প্রেশন মাথায় ছিল সেইটা উনি বদলায় দিছেন।

২. রাইসু ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক দিন পর পর ফোনে কথা হয়—আমি না হয় উনি কল করেন। উভয় ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো প্রয়োজনে কল করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা সেই প্রয়োজন পূরণ করতে পারি না। তাতে কিছু অবশ্য যায় আসে না। আবারো বেশ কিছুদিন পর হয় আমি না হয় উনি আমারে কল দেন। এইটা মজার ব্যাপার—পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিমবায়োটিক যে অংশটি থাকে, রাইসু ভাই এবং আমার মধ্যে সেখানে সিমবায়োসিস-এর শর্ত পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও তা চলমান আছে।

৩. ফোনে কথা হওয়ার চাইতে আরো অনেক অনিয়মিত ঘটনা উনার সঙ্গে দেখা হওয়া। তবে দেখা হইলে উনার সঙ্গে লম্বা সময় কাটানো হয়। নানা বিষয় নিয়া কথা হয়—খালি শিল্প-সাহিত্য নিয়া কোনোদিন কথা হইছে বলে মনে পড়ে না। একবার অবশ্য উনি আমারে জিগাইছিলেন আমি কী ধরনের বই কিনে পড়ি। সেইটা মনে হয় সার্ভে ছিল একরকম। আমি উনার বই ও লেখাও কম পড়ছি। তাই উনি লেখক, কবি, চিন্তক, বুদ্ধিজীবীসহ আরো যে যে সত্তা ধারণ করে থাকেন সেসব থেকে উনার ব্যক্তিসত্তাই আমি বেশি পর্যবেক্ষণ করতে পারছি। ব্যক্তি হিসেবে রাইসু ভাই অসাধারণ ও বিরল মানুষ—উনি অন্য মানুষের প্রতি প্রচুর পরিমাণ এমপ্যাথি ধারণ করেন এবং যে কোনো মানুষের সঙ্গে ইন্টারেক্ট করার সময় অই মানুষের প্রতি আন্তরিক সম্মানসহ ইন্টারেক্ট করেন। রাইসু ভাই নানা পরস্পরবিরোধিতা নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারেন, কিন্তু এই ক্ষেত্রে আমি কোনো পরস্পরবিরোধিতা বা ইনকনসিসটেনসি দেখি নাই—সকল শ্রেণীর ও বয়সের মানুষের সাথে একই রকম ব্যবহার করেন উনি, একই রকম সহানুভূতি ও সম্মানবোধ সহকারে।

৪. রাইসু ভাইয়ের যা যা কবিতা, গল্প পড়ছি তার কিছু আমার ভালো লাগছে, বেশির ভাগ ভালো/খারাপ কোনোটাই লাগে নাই—তবে উনার বেশির ভাগ লেখাই, সেটা কবিতা হোক আর ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাস, চিন্তা উস্কাইতে সক্ষম। এইটা উনারে অন্যদের থেকে আলাদা ও গুরুত্বপূর্ণ কইরা তুলছে বলে মনে করি। অন্যদের বলতে এইখানে আমি বাংলাদেশের যে সকল ব্যক্তি ফেসবুক ও অন্যান্য মিডিয়াতে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করে থাকেন তাদের বোঝাতে চাচ্ছি। রাইসু ভাই ছাড়া বাকিদের ক্ষেত্রে আমার পর্যবেক্ষণ হল তারা মূলত বিভিন্ন সোর্স থেকে নানা জিনিস সংগ্রহ কইরা রিসাইকেল করে সেটা পোস্ট বা পাবলিশ করে থাকেন। এই কারণে তাদের আলাদা বা গুরুত্বপূর্ণ বইলা বিবেচনা করতে পারি না।

৫. রাইসু ভাই অনেক কিছু করেন—তিনি লেখেন, আঁকেন, কথা বলেন, চিন্তা করেন, গান করেন, এমনকি অভিনয়ও করছেন। এই অনেক কিছুর মধ্যে উনার যেই প্রতিভায় আমি বিমুগ্ধ সেইটা হলো উনার নামকরণের প্রতিভা। তিনি তার উদ্যোগ ও কার্যক্রমের অসাধারণ সব নাম দিতে পারেন। যেমন ধরেন, পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বহিঃপ্রকাশ’—কী দারুণ!

৬. অনলাইন মার্কেটিং, ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট, কই থেকে কী টুল পাওয়া যায়, সেইগুলা দিয়া উনি কী কী করতে পারেন, উনার যে সব ওয়েবভিত্তিক উদ্যোগ আছে সেইগুলারে কেমনে আরো বড় করা যায়—এই সব নিয়া রাইসু ভাইয়ের সঙ্গে সবচাইতে বেশি কথা বলছি। উনি গভীর মনোযোগ নিয়া সে সব শুনছেন, নোট রাখছেন, এবং কার্যত যা কিছু করার প্ল্যান হইছে তার মধ্যে বেশি হইলে ১০% করছেন।

৭. উনি আমাকে নানা সময়ে নানা বিষয়ে লিখতে বলছেন, বিষয় ছাড়া যা খুশি লিখতেও বলছেন। আমিও প্রতিবার গভীর আগ্রহে কী নিয়ে লেখা যায়, কেমন হইতে পারে, কত দিনের মধ্যে লেখাটা দেয়া দরকার এইসব জিজ্ঞাসা করছি, নোট রাখছি এবং এখন পর্যন্ত কোনো একটা লেখাও লিখি নাই। দেখা যাইতেছে রাইসু ভাই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার থেকে বেশ এগিয়ে আছেন, অন্ততঃ ১০ ভাগ।

৮. ২৫ থেকে ৩৫ বছরের বিরহকাতর, প্রেমে হতাশ, কর্মজীবনে অসফল জনতা মনোরোগ চিকিৎসক বা কোয়ান্টাম মেথড বা ইউনানী পদ্ধতির বদলে রাইসু ভাইকে প্রেরণা হিসেবে নিতে পারেন। উনি ৫০ বছরে এসেও দারুণ উদ্যমী, জীবন ও জগতের আগ্রহী পর্যবেক্ষক এবং তার জীবনে প্রেমের ব্যাপক প্রাচুর্য। রাইসু ভাই একবার বললেন, “বস আমার যে কত প্রেমিকা, এরা যে কী মজার মজার কাহিনী করে!” এবং ঘটনা সত্য।

৯. একবার প্রায় মধ্যরাতে রাইসু ভাইকে তার বাসা থেকে নিয়া গেলাম ধানমণ্ডির স্টার-এ, সঙ্গে আমার বন্ধু জাহিদ। বন্ধু জাহিদের তখন একটা সিনেমাসুলভ রোমান্টিক কাহিনী চলতেছে, যার নায়িকা তখনো সাড়া দেয় নাই—একরকম তাড়ায়ে দিছে আসলে, কিন্তু আমরা চেষ্টা চালায় যাইতেছিলাম। জাহিদের প্রেমকাহিনী শুনতে শুনতে রাইসু ভাই বলল, এই রকম যতদিন প্রেমটা হবে না ততদিনই প্রেম থাকবে। প্রেম হইয়া গেলেই প্রেম শেষ।

১০. উপরের পয়েন্টে উনার প্রেম বিষয়ক কথাখানি একটা চমৎকার প্যারাডক্স। কিন্তু বক্তব্য বুঝতে এবং সেইটারে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করতে আমার বা আমার বন্ধুর সমস্যা হয় নাই। উপরের পরস্পরবিরোধী কথাটা আলাপের মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা একেবারেই বাদ দিয়া কমুনিকেট করতেছে—এই পর্যবেক্ষণ ফেসবুকে রাইসু ভাইয়ের নানা রকম আপাত প্যারাডক্সধর্মী বক্তব্য বুঝতে সাহায্য করতে পারে। অন্ততঃ আমারে কিছু ক্ষেত্রে করছে বলে মনে হয়।

১১. উনার সম্পর্কে অন্যদের লেখাগুলি পড়লাম। বেশ কয়েকজন তারে একজন বিরল ধরনের মানুষ হিসেবে গণ্য করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন যে উনি ভণ্ড না। এবং এইটা আমারও পর্যবেক্ষণ—রাইসু ভাই খুবই অথেনটিক একজন পারসন, সন্দেহ নাই। উনার অথেন্টিসিটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হইয়া উঠছে—এইটা দুঃখজনক। এইটা দিয়া আমাদের দেশের মর্মান্তিক অবস্থাটা বোঝা যায়। যেই দেশে একজন ব্যক্তির অথেন্টিসিটি তারে বিরল বা বিশেষ কইরা তোলে সেই দেশের সার্বিক অবস্থা খুব একটা সুবিধার না।

১২. রাইসু ভাইয়ের কোনো প্রেমিকার সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ হয় নাই। হয় নাই বলে আফসোস করছি, এমন না। ইন ফ্যাক্ট, তার পরিমণ্ডলের তেমন কাউরেই আমি চিনি না। এইটা বেশ অস্বাভাবিক—উনার একাধিক বাসায় আমি দীর্ঘ সময় পার করছি, সুতরাং। স্কয়ার হসপিটালের উল্টা দিকের বাসায় মনে হয় এক বা একাধিক রাতেও থাকছি—থাকছি বলতে ঘুমাইছি আর কি, যতদূর মনে পড়ে। তবে এইটা আমি বুঝতে পারি যে উনার পরিচিত মানুষের পরিমণ্ডল অনেক বিশাল—কিন্তু উনি সম্ভবত উনার অথেন্টিসিটির কারণেই বেশির ভাগ মানুষের সাহচর্যে স্বস্তিবোধ করেন না বা অনেক মানুষ তার সাহচর্যে অস্বস্তি বোধ করে অথবা দুইটাই। আমার মনে হইছে উনি অপেক্ষাকৃত কম বয়সের মানুষের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন—তারা জীবনের যাবতীয় ভাণ তখনও রপ্ত কইরা ওঠে নাই বইলাই বোধহয়।

১৩. রাইসু ভাইয়ের পরিমণ্ডলের কিছু মানুষের সঙ্গে আমার দেখা হইছিল উনার সঙ্গে শাহবাগের এক বার-এ গিয়া। পিকক ছিল বোধহয়। অইখানের ওয়েটার থেকে অতিথি—সবাই তারে চিনে। নিজের নাম মনে করতে পারতেছে না এই লেভেলের টাল, কিন্তু রাইসু ভাইরে দেইখা ঠিকই ডাক দিতেছে—অবস্থা অনেকটা এইরকম ছিল। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, রাইসু ভাইকে যারা অফলাইনে চিনেন তারা উনারে বেশ পছন্দ করেন। রাইসু ভাই সহজ মানুষ, তারে পছন্দ করাও সহজ।

১৪. রাইসু ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়ার আগে একটা বিষয় নিয়া আশঙ্কিত ছিলাম—কোথাও পড়ছি বা কারো থেকে জানছিলাম যে ব্রাত্য রাইসু নাকি হুমায়ুন আহমেদের হিমু নামক ভাদাইম্যা চরিত্রের বাস্তব রূপ। পরে হিমু বিষয়ক কোনো একটা বইয়ের উৎসর্গ রাইসু ভাইকে করা হইছে—এটা আবিষ্কার করে আশঙ্কা আরো প্রবল হইছিল। হিমু আমার খুবই অপছন্দের একটা চরিত্র। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সত্তর ও আশির দশকে জন্ম নেয়া প্রজন্মের মেয়ে অংশের বিরাট ক্ষতিসাধন করছেন শাহরুখ খান আর ছেলেদের ক্ষেত্রে সেটা করছেন হিমু নামক এই চরিত্র। পরবর্তীতে স্বস্তির সঙ্গে দেখলাম যে রাইসু ভাই মানুষটারে কোনো দিক দিয়াই হিমুর সঙ্গে মিলানো যায় না। উনি র‍্যান্ডম কাজ করেন না, মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন না, অদৃষ্টের হাতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছেড়ে দিয়ে মহানন্দে ঘুরে বেড়ান না, খালি হিমুর মতো অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন, তাও সেইটা ফেসবুকে।

১৫. ব্যক্তি রাইসু সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা পাইছিলাম আনিকা শাহ-এর থেকে—যখন তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আনিকা রাইসু ভাইকে ভীষণ পছন্দ করতেন, এখনো বোধ করি করেন। আমরা রাইসু ভাইরে নিয়া অনেকবার কথাও বলছি মনে পড়ে। আনিকার থেকে রাইসু বিষয়ক কিছু গল্প শুনছি—শুনতে শুনতে রাইসু ভাইয়ের প্রতি তার মুগ্ধতা টের পাইছি। যেহেতু আনিকার প্রতি আমার অপার মুগ্ধতা ছিল (এবং আছে) সেহেতু তিনি যখন অন্য কারো প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন তখন আমি ঈর্ষাকাতর হইতে পারতাম। সেটা একেবারেই হয় নাই—বরং আমিও রাইসু ভাইয়ের প্রতি মুগ্ধতা বোধ করছি। রাইসু ভাইয়ের ক্ষেত্রেই এইটা সম্ভব।

১৬. ছোট বড় নানা বিষয়ে আমার নিজের যেসব ধ্যান-ধারণা আছে সেগুলা খুবই শক্ত—নিজের বুঝের বিপরীত কোনো ধারণা আমি সহজে গ্রহণ করি না। অপরের কনভিন্সিং আরগুমেন্ট শুনে হয়তো আমি চুপ করে যাব, কিন্তু আদতে মোটেই কনভিন্সড হব না। তো আমার এইরকম একটা ধারণা হইল—কথা বলার সময় আমরা উচ্চারণ করি ‘করতেসি/ যাইতেসি’ এইরকম, সুতরাং লেখার সময় নাগরিক চলতি ভাষাতেই যদি লেখি তাহলে এইগুলা ক্ষেত্রে ‘ছ’ এর বদলে ‘স’ লেখা উচিত। রাইসু ভাইয়ের লেখায় দেখতাম উনি নাগরিক চলতি ভাষাতে লিখতেছেন—‘করতেছি/যাইতেছি’ ছ দিয়াই লেখেন। এইটা আমার মৃদু বিরক্তি উদ্রেক করতো। একদিন উনারে জিগাইলাম। রাইসু ভাই সেদিন যা বলছিলেন তার সারমর্ম হইল, ইংলিশ বর্ণমালায় এমন অনেক লেটার আছে যেগুলার এক এক শব্দের ক্ষেত্রে এক এক উচ্চারণ। সহজ উদাহারন, C অক্ষরটি। ক, চ, ছ—অনেক রকম উচ্চারণ এইটার, সেইটা নিয়া আমাদের মাথাব্যথা নাই। একটা অক্ষরের একাধিক উচ্চারণ হইতে পারে সেটা আমরা স্বাভাবিক বলে মেনে নিচ্ছি, কিন্তু বাংলাতে এইটা মানতে নারাজ। ‘স’ উচ্চারণ ‘ছ’ অক্ষর দিয়া লিখা যাইতেই পারে আসলে। আমি রাইসু ভাইয়ের কথায় কনভিন্সড হইলাম এবং ছ/স বিষয়ে আমার চিন্তা সঙ্গে সঙ্গেই মাথা থেকে ফেলে দিয়ে তারপর থেকে ‘করতেছি/যাইতেছি’ ধরনের বানান লিখছি, প্রমাণ এই লেখা। রাইসু ভাই এইটাও বলছিলেন যে ‘ছ’ অক্ষরটাকে অনেকেই গ্রাম্য/ আনস্মার্ট গণ্য করেন। আমি এইটাতেও একমত।

১৭. রাইসু ভাইয়ের একটা প্রতিষ্ঠান তথা মিডিয়া-বিরোধী ইমেজ প্রচলিত আছে। তিনি সেটা হইতেও পারেন। তবে রাইসু ভাই ইন্টারনেট নামক মিডিয়া যে শুধু আগ্রহের সঙ্গে ব্যবহার করেন তাই না, উনি ইন্টারনেটে যে সকল হাবিজাবি আর্টিকেল পাওয়া যায় সেগুলি পড়েন এবং দারুণভাবে প্রভাবিতও হন। প্রভাবিত হয়ে তিনি প্রায়ই শিশুসুলভ (এবং হাসাহাসি করার মতো) কাজ কারবার করে থাকেন। একবার বললেন যে উনার আর চশমা পরার দরকার নাই—কোনো এক ওয়েব সাইটে তিনি এক লেখা পড়ছেন যেখানে কিছু কায়দা দেয়া আছে যা প্র্যাক্টিস করলে নাকি চোখের সমস্যা এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়। তো সেই সব কায়দা তিনি প্র্যাকটিস করে যাচ্ছেন আর কি। এইরকম তিনি মাঝে মাঝে নতুন ও বৈপ্লবিক ডায়েট ট্রাই করেন, ইয়োগা করার পরিকল্পনা করেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

রাইসু ভাই সম্পর্কে ৫০টা পয়েন্ট বা টীকা লেখার ইচ্ছা নিয়া এইটা লেখা শুরু করছিলাম। প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে, লেখাটা শেষ করতে পারছি না। রাইসু ভাই বহুমাত্রিক ও বর্ণময় চরিত্র, তার সম্পর্কে ৫০টা পয়েন্টের বেশিই লেখা সম্ভব। লেখা শেষ করতে না পারার পিছনে মূল সমস্যা আমার আলস্য। এই জন্য সিদ্ধান্ত নিলাম যে তিন ভাগে লিখবো, প্রথম দুই ভাগে ১৭টা করে পয়েন্ট, শেষ কিস্তিতে ১৬টা। তাহলে সম্ভবত শেষ করা যাবে।

একদিন যেন আপনার সম্পর্কে ১০০টা পয়েন্ট লেখার উপলক্ষ্য আসে। আপাতত রাইসু ভাই, আপনাকে শুভ জন্মদিন—২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯ এই তিন বছরের।

নভেম্বর, ২০১৯

Leave a Reply