‌‌‌”আমি একটা কী এমন!” — ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌হাবিবউল্লা কাজী / সর্বসাধারণ ১৯৯৯

১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বসাধারণ নাম দিয়া পাবলিকের ইন্টারভিউগুলি নেওয়া শুরু করি। প্রথম আলো পত্রিকার উপসম্পাদকীয় পাতার কোনা দিয়া ছাপা হইত। আলস্যের কারণে খুব বেশি নেওয়া হয় নাই। দশ এগারোটা হবে। জানুয়ারি ২০০০-এর পরে আর নেওয়াও হয় নাই। হাবিবউল্লা কাজীর সঙ্গে আলাপ হয় কাওরান বাজার এলাকায়। – ব্রাত্য রাইসু ২৯/৮/১৩

হাবিবউল্লা কাজী, চণ্ডিপুরদি, সিরাজদিখান (১৯৯৯)
হাবিবউল্লা কাজী, চণ্ডিপুরদি, সিরাজদিখান; ছবি. বাবু আহমেদ ১৯৯৯

হাবিবউল্লা কাজী, পিতা: মাতবর আলী কাজী, গ্রাম: চণ্ডিপুরদি, থানা: সিরাজদিখান, ইউনিয়ন: লতিফদিখান, জেলা: মুন্সিগঞ্জ।


আপনের নাম?

আমার নাম হাবিবউল্লা কাজী।

দেশ কোথায়?

দেশ আমাদের সেরাজদিখান, বিক্রমপুর।

এইখানে কোথায় আসছিলেন?

ইস্তেমাই আইছিলাম।

ইস্তেমা কী রকম হইলো?

বালোই। খুব ভালো। অনেক লোক অইছে।

এর আগে আইছিলেন ইস্তেমায়?

হ।

প্রত্যেক বছরই আসেন?

হ, আল্লায় যদি আনে।

কী কাম করেন ?

এমনে সংসারের কাম করি।

দেশের অবস্থা কী রকম চলতাছে?

দেশের অবস্থা ত ধরেন, এই যে বিষ্টি গেছে না একটা? এই বিষ্টিয়ে ফসল-পানি বহুত মাইর গ্যাছে। গরিবের অবস্থা খুব খারাপৈ। গিরস্তের ঐ শান্তি নাই।

গিরস্তেরা খাইতে পারে নি তিন বেলা?

খাইতাছে না অনে? কামলা-মজুরি খাইট্টা খাইতাছে।

জমিজমা আছে কিছু আপনের?

সামাইন্য কিছু আছে। মনে করেন এয়োই আছিলো। আগে বালা আছিলাম, খায়োইয়া কম আছিলো। এহন সংসার বাইড়া গেছে।

পোলাপাইনরা কয়জন?

আমাদের আছে ছয় মাইয়া, চাইরটা ছেলে। হেগো আবার ছেলেমেয়ে আছে।

ভোট, ভোট দেন নি?

নির্বাচন অয়, ভোট দেই।

এইবার হবে নির্বাচন?

এইবার? কইতে পারি না আমি সঠিক। নির্বাচন তো একবার হইয়া গেছে, চেরমেনি নির্বাচন হইয়া গেছে। মেম্বরি-চেরমেনি নির্বাচন হইয়া গেছে।

দেশ কেমন চলতেছে আপনার ধারণা?

দেশ, এখন আছি ত বালোই আল্লায় দিলে। ঐ বিষ্টিডায় ফসল-পানি মাইর গিয়া মাইনষে একটু অসুবিদায় আছে। এমনে দেশ বালোই চলতাছে।

আগে কেমন চলতো দেশ?

দেশ ত ধরেন এরশাদের আমল, জিয়ার আমল, তারপরে শেখের আমল, তারপরে আইয়ুব খানের আমল এইগুলি তো আমি সবোই দেখছি।

যেয়ই রাজা অয় মনে করেন হের একটা স্বার্থক আছে না, এইডা না কইরা কি আর ছাড়ে? গমটম দিতাছে। এই গেরাম দেশের মানুষ যারা মেম্বর-চেরমেন উপযুক্ত লোক আছে, মনে করেন দেইক্কা দেইক্কা হাউদারি করতাছে । এগুলির অ্যাকশন কে নিবো? এর অ্যাকশন নেয়োইয়া… আমার মত মাইনষে কইয়াও কিছু করতারতো না।

কইয়া লাভ নাই?

না, কইয়া আরো বিপদে পড়মু। উচিত কতা কইয়া বিপদে পড়মু! না-কমু হেয়োই বালা। কয়দিন বা বাঁচমুই! করুক হেরা, যা মনে তাই করুক।

কত হইলো আপনের বয়স?

আমাদের বয়স ৭৭বছর বয়স হইবো।

এই বয়সে আইলেন এত কষ্ট করতে?

আহা রে! মনে করেন কয়দিন বাঁচমুই, একটা হজের মতোন। লাখ লাখ মানুষ অয়, আর আমি একটা কি এমন! হ্যাঁ? আল্লার কাছে তো একটা জবাব দিতে হইবো।

কী কইলো ইস্তেমায়?

ইস্তেমায় বয়ান-টয়ান কইরা মানুষেরে বুঝাইলো এইভাবে এইভাবে চলবা। সারা রাইত বয়ানই করছে এরা। যেমন আরবিতে বলছে আবার বাংলায় বুঝাইয়া দিছে।

বুঝছেন?

হে, সুন্দরমতো বোঝাইছে।

পড়ালেখা করছেন কিছু?

সামাইন্য কিছু, সামাইন্য। নিজে দস্তখতটা জানি, কোনোরকম। এইগুলারে দো পড়ালেহা কয় না। এহন আমার টাইম যায়গা, আমি যামুগা!

তো এখন কী করলে দেশের ভালো হইবো মনে করেন?

দেশের বালো তহন হেইডা কইতে পারবো যারানি বড় নেতাটেতা আছে, হেরা কইতে পারবো। আমার বলার কী আছে, কী বলবো?

দেশ যারা চালায় হেগো কিছু কইতে চান আপনে?

নাহ, না না! ঐসব কতা কইয়া কোনো কাজ নাই। কী লাব হইব, আরো মানুষের কাছে দুষখুন হবো কইয়া।

 

৭/২/১৯৯৯, প্রথম আলো (পত্রিকায় শিরোনাম: উচিত কতা কইয়া বিপদে পড়মু!)

 

Flag Counter

Leave a Reply