‘দোরা কাউয়া’ কবিতা প্রসঙ্গে পিনাকী ভট্টাচার্য

ব্রাত্য রাইসুর কবিতারে যদি আপনার কবিতা মনে না হয় তাইলে আপনি কবিতার পাঠক নহে। কবিতা ইজ নট ইউর কাপ অব টি।

ব্রাত্য রাইসুর একটা কবিতা আছে “দোরা কাউয়া পেয়ারা গাছে” এইটা নিয়া মাতম শুরু হইছে বাম মহলে চলতেছে হাসাহাসি। এইটা কী কবিতা হইছে? এইটা কি কবিতার ভাষা হইতে পারে?

জ্বি জনাব এইটা একটা উত্তম কবিতা। তার আগে আসেন কবিতা কেমনে কবিতা হইয়া ওঠে তার তালাশ নেই।

কবিতা নিয়া বুদ্ধদেব বসু একটা চমৎকার উপমা দিছিলেন। “ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো/ বাটা ভরা পান দেবো গাল ভরে খেয়ো।” এর মধ্যে অন্ত্যমিল আছে কিন্তু কবিতা নাই। এ যেন পাশের বাড়ির মাসি পিসি যাগো আমরা নিত্যদিন দেখি গাল ভইর‍্যা পান চিবাইতে। কিন্তু ” ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো/ খাট নেই পালং নেই চোখ পেতে বসো।” এইটা হঠাৎ করে সাধারণ ছড়া থিকা কবিতা হইয়া উঠে। কারণ “চোখের” মতো অপরিসর জায়গায় একটা মানুষ বসবে এটা ভাবার জন্য এক তীব্র কল্পনা শক্তির প্রয়োজন হয়। পাঠককে এক টানে এক অন্য জগতে ঢুকিয়ে ফেলেন কবি শুধু “চোখ” শব্দটা ব্যবহার করে।

কবিরা রহস্যের জাল বুইন্যা বুইন্যা অগ্রসর হন। পাঠক সেই জাল খুইল্যা খুইল্যা কবিতারে আস্বাদন করে। আপনি যদি কবিতারে লিটারারি মিনিং দিয়া বুঝার চেষ্টা করেন তাইলে আপনি কবিতা বুঝনের মতো লায়েক হইতে পারেন নাই। কবিতা বুঝা আপনার কাম না। অন্য কাম করেন।

এইবার আসেন “দোরা কাউয়া” নিয়া কিছু কথা কই। মডার্নিজমের সবচাইতে বড় সংকট হইতেছে সে নিজেরে আর প্রকৃতিরে আলাদা মনে করে। যদিও সে নিজেই প্রকৃতির অংশ। সে নিজেরে ইগো সেন্টিক একটা দুনিয়ার কেন্দ্রে আছে বইল্যা ভাবে।

এই কারণে তার কাছে মানবিক কর্মকাণ্ড মানবিক প্রেম যৌনতা শৈল্পিক হইলেও কাউয়ার কামকাজ, তার যৌনতা ডিসগাস্টিং; যেহেতু সে আপনার কাছে আদার। তাই আপনি আপনার যে সৌন্দর্য আর শিল্পের জগত নির্মান করেন সেইটাতেও থাকে প্রাকৃতিক অন্য কিছুরে আদার ভাবার প্রবণতা। আপনারে এই বাস্তবতার সামনে রাইসু দাঁড় করাইয়া দিছে। এইখানে রাইসু এক অনন্য কবি হিসাবে উত্থিত হইছে।

আর আপনি ডিসগাস্টেড হইয়া মডার্নিজমের প্রোডাক্ট হিসাবে পরিচিত হইছেন। আপনি রবি ঠাকুরেই আটকাইয়া থাকেন। মডার্নিজমের ক্রিটিক করা পোষ্ট মডার্ন কাউরে বুঝার হিম্মত হইতে আপনার ম্যালা দেরী। তাই নিজের কুয়াটারে ভালো কইরা চিন্যা রাখেন।

১৪/৩/২০১৮

Leave a Reply